কৌতূহলী পতন
(নিউটন ও আপেলের গল্প)
একটি শান্ত বিকেল। লিঙ্কনশায়ারের গ্রামাঞ্চলে এক পুরনো আপেল গাছের নিচে বসে আছেন তরুণ বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন। চারপাশে প্রকৃতির সুর—পাখির কিচিরমিচির, পাতার মৃদু শব্দ, আর দূরের কোথাও কুকুরের ডাক। কিন্তু নিউটনের মন প্রকৃতির এই দৃশ্যে নয়; তার চিন্তা তখন মহাবিশ্বের গভীর রহস্যে নিমগ্ন।
গাছটি, যেন প্রকৃতির একটি নীরব দর্শক, দাঁড়িয়ে আছে স্থির আর গম্ভীর। গাছের ডালে লালচে পাকা আপেল ঝুলছে। একটি আপেল, বিশেষ করে, ডালের কোণায় টলমল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির একটি নীরব টান যেন তাকে টেনে নিচ্ছে।
নিউটন গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে আছেন। তার চিন্তা তখন আকাশের চাঁদ, তারকা আর তাদের রহস্যময় গতিপথ নিয়ে। কেন চাঁদ আকাশে স্থির থাকে? কেন তারা নিচে পড়ে না?
ঠিক সেই মুহূর্তে, আপেলটি যেন নিউটনের মনের অজানা প্রশ্ন শুনে ফেলে। হঠাৎ করে ডাল থেকে খসে পড়ল সেটি। তেমন কোনো বড় শব্দ নয়, কিন্তু তার পতন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আপেলটি হালকা টুপ শব্দ করে নিউটনের মাথায় পড়ল।
নিউটন চমকে উঠলেন। মাথা চুলকে আপেলটি তুলে নিলেন হাতে। আপেলের দিকে গভীর মনোযোগে তাকিয়ে রইলেন। অন্য কেউ হলে হয়তো এই ঘটনাকে একেবারেই তুচ্ছ মনে করত, কিন্তু নিউটনের মন এতে অনন্য প্রশ্নে ভরে গেল।
“আপেলটি সোজা নিচে পড়ল কেন? পাশের দিকে বা উপরে কেন নয়?”—তিনি নিজেকে প্রশ্ন করলেন। প্রশ্নটি যেমন সহজ, তার মধ্যে ততটাই গভীরতা লুকিয়ে ছিল।
এই আপেল যেন এক দূত, যে তাকে মহাবিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন বার্তা দিল। নিউটন বুঝলেন, মাধ্যাকর্ষণ নামে এক অদৃশ্য শক্তি সবকিছুকে পৃথিবীর দিকে টেনে নিয়ে আসে। এই একই শক্তি হয়তো চাঁদ, গ্রহ এবং নক্ষত্রদের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে।
বিকেল থেকে রাত হয়ে এল। নিউটন তখনও গাছের নিচে বসে আছেন, তার মন এক নতুন আলোর পথে ছুটছে। একটিমাত্র আপেলের পতন পৃথিবীর বিজ্ঞানকে বদলে দেওয়ার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
0 Comments